Saptannoyi Crest

Saptannoyi Crest

Saturday 15 April 2017

প্রশান্ত সরকারের কলমে

ব-দ্বীপীয়
 প্রশান্ত সরকার
--------------------­­-----------------
মৃত্যু না মনস্তাপ, কোন শব্দে বেজে ওঠে বুক? আসলে আমিও সেই আরব্ধ নাবিক, দিশাহীন... তবু বাঁচার অবকাশ থেকে জন্ম নেয় স্বজনের দ্বীপ। চেতনারা অনুক্রমী হলে ঘন হয়ে আসে স্বভাবের পাড়া। নষ্ট হয়ে যাওয়া ততটা সহজ নয়, যতটা কম্পাস - এখন দিক নির্ণয়ের সময়, কোনদিকে জেগে আছে পাখি কিংবা বলতে পারো এখনও ফুলেরা লেলিহান।
#
যতদূর তাকাবে, ততদূরই শূন্যতা আমাদের। একটা ব্ল্যাকহোল থেকে যে দীর্ঘশ্বাস জন্ম নিতে পারে তার কোনও নামান্তর নেই। যতদূর ভেবে নিতে পারো ততদূরই পৌঁছে দেবে ঘুড়ি। যখন আকাশ ছাড়া আমরা কেউই ততটা উদার নই, যতটা উদার হলে একটা সূর্য জন্ম দেওয়া যায়...

মেঘনা চক্রবর্তীর একটি কবিতা

কিছুটা বয়স্ক হবে হলদে সকাল,
কিছুটা বয়স্ক হবে চাঁদের বাড়ীর উঠোন-ঘর-বাগান..
কিছুটা বয়স্ক হবো আমরা, ব্যক্তিগত রাগ-অনুরাগের আবদার-আদর..
ভালোবাসায় বয়স বাড়ুক নতুন বছর,
শুভ হোক নববর্ষ এর মুহূর্তক্ষণ......

সুনৃতা মাইতির কলমে পয়লা বৈশাখ

১লা বৈশাখ  

সুনৃতা মাইতি
 
কে যেন বলেছিল স্বপ্নের নাকি কোনও রং হয়না । গভীর ঘুমে তলিয়ে যাবার পথে স্বপ্ননগর আসে। আর সেই রঙহীন অবচেত দোলায় ঘুরে বেড়ায় মনগহন। কিন্তু আমি  যে তখন প্রতিটি স্বপ্নে  দিব্যি দেখেছি  রঙের খেলা । শুধু স্বপ্ন তো নয়! বিবর্ণ সাদাকালো অ্যালবামে লুকিয়ে থাকা রঙের ছোঁয়া খুঁজে খুঁজে কত দুপুর কেটে গেছে ... কত সন্ধ্যার মরা আলোয় খুঁজে পেয়েছি  রঙিন শব্দের কলতান.... কত রাতের নিকষ অন্ধকার ঢেকে গেছে রাতপরীদের রঙমিছিলে।

সেই রংরেজ সময়ের ঢং ছিল পুরোদস্তুর।  আচ্ছা স্মৃতির কি কোনও নির্দিষ্ট রঙ আছে? কে যেন বলেছিল ধূসর । কিন্তু আমি তো চোখ বুজলেই বেশ দেখতে পাই স্মৃতির ক্যানভাসে ভেসে ওঠা সবুজ আবহ, বৃষ্টির জলে রূপোলী ঝিলিক , ভাদুরিয়া রোদের আগুনখেকো খর রঙ,আশ্বিনের নীল মাখা সফেদ  প্রসন্নতা, অঘ্রাণের শীতমাখা আদুরে মুক্তো রঙের রোদ্দুর আর ফাগুনের পলাশ বরণ হ্যাংলামো।
     
এক একটা ফাল্গুণি বাসন্তি দুপুরে বয়ে যেত বেহিসাবি হাওয়া ।   খয়েরী ঝরা পাতার দল এলোমেলো ঘুরে বেড়াত এধারে ওধারে। অচেনা অজানা কোনও গলিপথ হাতছানি দিত আলগোছে।ওই দূরের আঁকাবাঁকা পথে কি যেন এক রঙিন নেশার হাতছানি।

আর চৈতি বিকেলের সর্বনেশে প্রহর শেষের খেলার রক্তাভ রঙ মেখে হারিয়ে যেত গোটা একটি বছর। পরদিন রাত পোহালেই পয়লা বৈশাখ । নতুন বছর । আমরা বলতাম একলা বৈশাখ ।সবাই হেসে কুটোপাটি হত।কেন!! ১লা তো লেখা থাকে কার্ডে। নববর্ষের কার্ডে। বৈশাখ বুঝি একলা ভারী ! ছোটো ছোটো হাতের তৈরী অপটু রঙচঙে কাগুজে কার্ডে ভুল বানান ভরা ট্যারাব্যাঁকা অক্ষর ।   হৃদয়ের প্রীতি ও শুভেচ্ছা ভরা । নীচে লেখা ১লা বৈশাখ । আর সণ , তারিখ । হৃদয়ের রঙ বুঝি লাল!

সময় বয়ে গেছে অনেক !  এখনও আশেপাশে কত রঙের খেলা নিরন্তর । তবুও ফ্যাকাসে হয়ে আসে রঙ। বড় সস্তার রঙ কি! নাকি কৃত্রিম! অথবা  বোধহয় চোখের জ্যোতি কমে আসছে। চৈত্র শেষের পথ ধরে এখনও নিয়ম বেঁধে আসে  বৈশাখ । পয়লা বৈশাখ । অথবা একলা বৈশাখ ।

শুভ আঢ্যর একটি কবিতা

ক্যালেণ্ডার ও লালদাগ 
শুভ আঢ্য
-----------------------------------------------
প্রতিটা তারিখ তোমার মধ্যে 
ঢুকিয়ে দিয়েছে একটা অন্তিমকাল
তুমি নতুনের কথা বলতে গিয়ে 
পেরোতে পারছ না ক্যালেণ্ডারের শিরদাঁড়া...
তোমার লাল দাগের বাইরে ছুটি হচ্ছে নতুন
তারিখগুলোর, অথচ তুমি চেয়ে রয়েছ পুরোনোর দিকে

প্রতিটা ক্যালেণ্ডার তার সময়গত অন্তিমতার কথা জানে
একটা নতুন বাগানে যেভাবে ফল আসবে বলে
পাখীরা শান দেয় ঠোঁটে, সেভাবেই তুমি তাকিয়ে রয়েছ,
আর হাওয়া সেই নতুন বীজ তোমার গর্ভের বাইরে
ছড়িয়ে দিচ্ছে, তুমি ফল হয়ে উঠছ এবং অন্তিমতা
প্রোথিত করছ গর্ভে, আরও একটা বছর
তোমার ভেতরে ঢুকিয়ে দিচ্ছে অন্তিমকাল, যেখানে
তোমার লাল দাগের বাইরে ছুটি হচ্ছে নতুন
তারিখগুলোর, যদিও তুমি চেয়ে রয়েছ পুরোনোর দিকেই

নিলয়ের একটি কবিতা

যাপন
..............

নিলয়
............................................

সকাল হতেই
হলুদবর্ণ গাঢ় এক স্যুপ, টেবিলের
গা থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে
স্যাঁতানো জানলার দিকে চলে গেল।
জানলা থেকে যতটা শহর,
তার ততটায় আধাআধি খবরের কাগজ।
স্যুপের গন্ধে সবাই, গোল করে জানলায় উঁকি দিচ্ছে।
ছবি তুলে রাখছে। কেউ শুঁকে বলছে, এ আর এমন কি?
চৌমাথায় একমাত্র খেঙরু, নাক টিপে ফাটা কুসুমের মত থ্যাবলানো সূর্য
দেখে গালাগাল দিচ্ছে
আর
বলছে,
..
তফাত যাও। তফাত যাও। তফাত যাও।

শুভম চক্রবর্তীর একটি কবিতা

শরীর
শুভম চক্রবর্তী
--------------------­­-----------


***
উদার অছিলা তুমি সন্তানসম্ভব
নিদ্রায় ও জাগরণে ট্যাবু ভেঙে যায়
গোল করে নেচে ওঠে শরীরপরব

********************­­***********

***
সব শব্দ নিরীশ্বর আপাতগহীন
পূর্ণতার বাড়ি যাই ভিক্ষাভান্ড হাতে
আকুলিবিকুলি মেখে ফিরি মাঝরাতে

********************­­*************


***
এখন যা কিছু ভ্রান্ত স্পর্শসুখ ছাড়া
সেতুর বুনট ভাঙে প্রতিটি কামড়ে
দ্বাররক্ষীহীন থাকে শরীরপাহারা

********************­­*************


***
তোমাকে কি দেবো বলো স্তনের আভাস
ছোঁয়াছুঁয়ি করি আর শান্তি নষ্ট হয়
এখন স্বীকার করি প্রেমটেমহীন
গড়াগড়ি খায় রোদে শরীরপ্রণয়

  ********************­­************


*****
কী মোহিনী জান বধু প্রিয় ছলাকলা
ঘুমের ভিতর ঢুকে পাঞ্জ করো স্নায়ু
হে নদীমাতৃক দেহ,হে কামকুশলা

  ********************­­**********


****
অপার মাধুরী ছিল চন্দ্রকরোটিতে
তুমি এসে ভেঙে দিলে সবুজ ন্যাকামী
দুর্বল লিঙ্গটি কাঁপে চন্দ্রাহত শীতে

  ********************­­***********


****
বাইট সমাপ্ত হলে,কবিতার গালে,
চুমু খাই,কাছে ডাকি,স্নেহ করি খুব
রাত্রিতে শরীর সত্য ; কবিতা সকালে


***
তোমাকে আঁকবো সোনা সে ক্ষমতা নেই
কলম ও কল্পনার দৌড় বড় কম
অপরাবাস্তব বড় শরীর-শরীর
সেখানেই আঁকা থাকে ছায়ার নিয়ম


****
ভোরের শীতল বাঁকে শরীর গড়ায়
ওগো মোহনিয়া এসো রক্ত-মাংস-হাড়ে
ভৈরব রাগের আঁচে শরীর পোড়াই

১০
****
দৃশ্যের ভিতর দিয়ে দেখেছি তোমাকে
যে দেখা অলীক আর যে দেখা জটিল
সে দেখার গলাদেহ পথে পড়ে থাকে

মৌসুমী বেরার একটি কবিতা

গুদামবাগান , পড়শি গলি , নুন মেখে চুন খসা দেড় হাজারি ঘরে আত্মনির্বাসনে আছি ।মৌসুমী বেরা


গুদামবাগান , পড়শি গলি , নুন মেখে চুন খসা দেড় হাজারি ঘরে আত্মনির্বাসনে আছি ।
তবু দেখি ভর দুপুরে ঘুলঘুলি চুঁইয়ে পড়তে থাকে পেষাই করা নরম মাটিতে তোমার পায়ের শব্দ ।
রোজ রাতে যখন নক্ষত্রদের গ্রাস করে একরাশ মুগ্ধতা চামচিকারা ছুটে আসে ঘুলঘুলি ভেঙে ,
বুঝি বা লক্ষ্যভেদী নিষাদের ভয়ে ... চরকি কাটে , আমার কুঁকড়ে ওঠে শরীর ।
আর ওপরের দেওয়াল টা অভিসম্পাত টুকু ছুঁড়ে ফেলে পালাতে চায় কোনোরকম ,
উঠতে থাকে আরো ওপরে , সব মাধ্যাকর্ষণ ছাড়িয়ে স্পুটনিকের মত ।
সবজিলতারা গতিপথ পাল্টে ফেলে ওই একটাই মাত্র আলোর উৎস থেকে ঝাঁপ দেয় অন্ধকারে , হলুদ বিষাদে ।
মগজাস্ত্রে লেপ্টে থাকা ডোরাকাটা দুঃখগুলোকে শিকড় থেকে উপড়ে ফেলবে বলেই ।
রোজ রাতে জানো ..... রক্ত - বীর্যের গন্ধ আসে দেওয়াল বেয়ে গুলিয়ে ওঠে গা , কালশিটে পড়ে চিমনিতে ।
দেখি সমগ্র বিশ্বের গোপন আঁতাত চলে !
আমার বন্দিদশা ভাঙবে বলে নীরাজনে বসে ।
দেওয়ালে তোমরা ঘুলঘুলি আর রেখো না গো ....

শুভ নববর্ষ ১৪২৪তে সৌরভ মিত্রের অঙ্কন